মির মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর এমবিএ ছাত্র, ছিলেন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক অদম্য ও নিঃস্বার্থ যোদ্ধা। তার মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঘটে, যা পুরো জাতিকে শোকাহত করে তোলে। মুগ্ধ ছিলেন একজন বিশিষ্ট ছাত্র, সফল ফ্রিল্যান্সার, স্কাউট লিডার, এবং একজন সেবাপরায়ণ ব্যক্তি যিনি মানবিক কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেছিলেন।
মেধা ও নেতৃত্বের প্রতিভা
মুগ্ধ তার ছাত্রজীবন থেকেই এক ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন, যা তার বিশ্লেষণ ক্ষমতার প্রতিফলন। শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র মুগ্ধ তার ক্লাসের প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং সকলকে অনুপ্রাণিত করতেন। তার গণিত বিভাগের শিক্ষকরা স্মরণ করেন যে মুগ্ধের নেতৃত্বগুণ এবং অমায়িক স্বভাব তাকে অনন্য করে তুলেছিল। প্রফেসর মুনুজাহান আরা বলেন, “মুগ্ধের হাসি ছিল নিষ্পাপতার প্রতীক। যখনই তাকে বকতাম, তার সেই হাসি আমার রাগ কমিয়ে দিত”।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে অসাধারণ সাফল্য
শিক্ষার পাশাপাশি, মুগ্ধ একজন সফল ফ্রিল্যান্সারও ছিলেন। Fiverr-এ তিনি প্রায় ১,০০০ কাজ সম্পন্ন করে ৫-তারকা রেটিং অর্জন করেছিলেন, যা তার কর্মজীবনের অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ। বিশেষ করে এসইও এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে তার পারদর্শিতা তাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
মানবিক কাজ ও স্কাউটিং
মুগ্ধ ছোটবেলা থেকেই মানবসেবায় আগ্রহী ছিলেন। ২০১৯ সালের বনানী অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে উদ্ধার কাজে অংশ নেন এবং তার এই সাহসিকতার জন্য তিনি 'জাতীয় সেবা পদক' পান। তিনি ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার এবং বিভিন্ন মানবিক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মুগ্ধ একসঙ্গে ছিলেন সবার পাশে। ঢাকার উত্তরা এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি তার সহযোদ্ধাদের পানি বিতরণ করছিলেন। তার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি শেষ সময় পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সাহায্য করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পুলিশের গুলিতে মুগ্ধ গুরুতর আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মৃত্যু গোটা জাতিকে শোকাহত করে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে মুগ্ধের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।
মুগ্ধের শেষ বিদায়
মুগ্ধের মৃত্যু সংবাদে তার সহপাঠী, শিক্ষক এবং পরিচিতজনেরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আজমল হুদা বলেন, "মুগ্ধ ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ছাত্র এবং একজন অসাধারণ নেতা। তার হাসি, তার মানবিক কাজ, তার প্রতিভা—সবকিছুই আমাদের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে গেছে"।
তার বড় ভাই, মির মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, বলেন, "মুগ্ধ ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করত এবং দুর্নীতির বিরোধিতা করত। তার এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা"।
মুগ্ধ তার জীবন দিয়ে দেখিয়ে গেছেন, কীভাবে একজন ব্যক্তি অন্যদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার আত্মত্যাগ চিরকাল বাংলাদেশিদের মনে থাকবে।
Comments (0)